সমকালের প্রধান শিরোনাম, ‘ছাত্র জনতার স্বপ্নের যাত্রা’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ছাত্র জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
সতেরো সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের ১৪ জন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বঙ্গভবনের শপথ নেন। বাতি তিন উপদেষ্টা পরে শপথে নেবেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস কদিন আগেও শেখ হাসিনা সরকারের তোপের মুখে ছিলেন। তিনিই এখন নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হলেন।
তার শপথের আগে দেশ সরকারহীন হয়ে পড়েছিল। অবশেষে ৭৯ ঘণ্টা পর এ পরিস্থিতির অবসান হলো।
ড. ইউনূস চিরচেনা গ্রামীণ চেকের ফতুয়া পরে শপথে নেন। তিনি বলেছেন মানুষকে রক্ষাই হবে সরকারের প্রধান কাজ।
শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকলেও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কাউকে দেখা যায়নি।
বঙ্গভবনের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক মিত্র দল বিকল্পধারার নেতা মাহী বি চৌধুরীকে।
প্রায় সকল পত্রিকার প্রধান শিরোনামে স্থান পেয়েছে শপথ গ্রহণের খবর। পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খবর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর, ‘সব অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “প্রচণ্ড নিষ্ঠুর পতিত স্বৈরাচারী সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। আমরা তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবো।”
এ ঘৃণ্য চেষ্টায় ব্যবহৃত হয়ে যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে, তাদেরকে আইনানুগ বিচারের মাধ্যমে শিগগির উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। দেশের সব মন্ত্রণালয়, সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নানা কর্মক্ষেত্রের জন্য তা প্রযোজ্য হবে বলে তিনি জানান।
ড. ইউনূস বলেছেন, ‘সব অপরাধীর বিচার করা হবে।’ অরাজকতার বিষবাষ্প যারা ছড়াবে, তাদের কঠোর হস্তে দমন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে, গতকাল দেশে ফিরে বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, আমার ওপর ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত করেন যে এদেশে কোনো জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।
আমাদের প্রথম দায়িত্ব।”

দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতার খবর, ‘মোদির শুভেচ্ছা স্থিতিশীলতার আশা যুক্তরাষ্ট্রের’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভকামনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বৃহস্পতিবার রাতে ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর টুইট করেন মোদি। এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
সেই সঙ্গে দুই দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও শান্তির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
মোদি লিখেছেন, বাংলাদেশে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আশা করছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথাও বলেন তিনি।
এদিকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার স্থানীয় সময় গত বুধবার এ কথা জানান।
নিউ এইজের প্রথম পাতার খবর, ‘Sajeeb makes U-turn, says Hasina to return home’। এতে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ।
ভারতীয় গণমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে এমনটা জানা যায়।
গত সোমবার তার মা, ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সে সময় সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন যে তার মা আর রাজনীতিতে ফিরে আসবেন না।
তবে এখন তিনি সেই মন্তব্য থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। জানান, “গত দুই দিনে সারাদেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর ক্রমাগত হামলার কারণে অনেক কিছু বদলে গেছে।’’
তবে শেখ হাসিনা ‘অবসরপ্রাপ্ত না সক্রিয়’ রাজনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশে ফিরবেন সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন যে তার মা এতটা কঠোর পরিশ্রমের পরেও একদল লোক তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। এতে তিনি হতাশ হয়েছেন।
যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর, ‘সারা দেশে চলছে লুটতরাজ’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হওয়ার পর গত দুই সপ্তাহ ধরেই ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করছে অপরাধী চক্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ এসেছে এক লাখের বেশি। যারা ডাকাতি করছে তাদের বেশিরভাগ টোকাই এবং উঠতি বয়সি।
চক্রের সদস্যরা চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে তৎপর হয়ে পড়েছে। ৫ই মে প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পর সুযোগসন্ধানীরা অধিকতর তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা থানা এবং পুলিশি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করলে ঢাকাতেই অন্তত ৮০ পুলিশ সদস্য নিহত হন।
প্রাণ বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। আক্রান্ত হয় দেশের প্রায় ৪০০ থানা। বন্ধ হয়ে যায় অনেক থানার কার্যক্রম। এই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠে পেশাদার অপরাধী ও মহলবিশেষ।
এদের রুখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাড়া-মহল্লায় গড়ে তোলা হয়েছে ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি। মসজিদে মসজিদে করা হচ্ছে মাইকিং। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানিয়েছে, চলমান অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বন্ধের মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় শক্ত অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর, ‘নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ, এখনো চালু হয়নি থানা’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হলেও দেশের থানাগুলো এখনো চালু করা যায়নি।
নিজের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা এখনো চিন্তিত; তাই থানায় যোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার থানাগুলো শিগগির পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের কর্মস্থলে আনা একটা চ্যালেঞ্জ।
অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার মো. মাইনুল হাসান যত দ্রুত সম্ভব থানায় বসে কাজ শুরু করার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্তত চেয়ার–টেবিল বসিয়ে দ্রুত মানুষকে সেবা দেওয়া শুরু করতে বলেছেন তিনি।
তবে ঢাকার থানাগুলোয় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এখন যে অবস্থা, তাতে কার্যক্রম চালু করতে সময় লাগবে।
মামলা নথিবদ্ধ করার কম্পিউটার, পুলিশ সদস্যদের যানবাহন, অস্ত্র ও রসদ সামগ্রী, চেয়ার ও টেবিলসহ যা যা ক্ষতি হয়েছে, তার তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অস্ত্র ও মালামাল লুটের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন। এরপর সারা দেশের থানাগুলো পুলিশ শূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে থানাগুলো পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।