ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নতুন দিল্লির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এর জেরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির ওপর চীনের প্রভাব বাড়তে পারে। ওয়াশিংটনের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের অ্যাডজান্ট ফেলো নীলান্তি সমরানায়েক বলেছেন, হাসিনার পদত্যাগ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলির সাথে ভারতের সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে।
সমরানায়েক মনে করেন, তিনি (হাসিনার) সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে দিল্লির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং ভারতের সাথে তাঁর দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ছিল। হাসিনার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া আঞ্চলিক সম্পর্ককে আরো খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ এখন একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে যথেষ্ট সময় লাগবে, তাই অন্তর্বর্তী সরকারের ভারতের সমর্থনের প্রয়োজন হবে।
ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ বিদেশ নীতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে শুরু করেছিলেন, যার লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক দেশগুলির সাথে সম্পর্ক জোরদার করা। বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াতে ইসলামী ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের পরিবর্তে চীন ও পাকিস্তানের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ। প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বিশেষভাবে শক্তিশালী। মে মাসে পিপলস লিবারেশন আর্মি বলেছিল যে তারা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সাথে একটি যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করবে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পরে বাংলাদেশ চীনা অস্ত্র রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাপক ছিল, যা প্রায় ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশের পরিস্থিতির জেরে ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছে
আগে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রথম সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান এবং সম্ভবত পরবর্তী নেতৃত্বের মধ্যে পূর্বপরিকল্পিত কিছু ধারণার কারণে ভারতের প্রতি স্বল্প সময়ের জন্য নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে। তবে ঢাকার সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগের ওপর ভিত্তি করে। তাই যেকোনো মন কষাকষি দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে না। ‘
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্কট লুকাস জোর দিয়েছিলেন যে ‘ভারতের আঞ্চলিক অবস্থান শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে তার নিজস্ব স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির উপর। তাই আঞ্চলিক পরিবর্তন সত্ত্বেও, যদি ভারতে একটি স্থিতিশীল সরকার থাকে এবং দেশ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগত উন্নতি করতে থাকে, তাহলে আপনার সামনে সেরা সুযোগগুলি আবারো ফিরে আসবে।
‘উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তার কারণে আঞ্চলিক দেশগুলি এখনও ভারতের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।
কুগেলম্যান মনে করেন , আপনি যদি এই অঞ্চলের চারপাশে তাকান, এমনকি চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং উপস্থিতি সত্ত্বেও, তাহলে দেখতে পাবেন এখনও এমন অনেক দেশের সরকার রয়েছে যারা চীন এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে আগ্রহী এবং অনেক ক্ষেত্রে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় তারা।
মালদ্বীপের প্রসঙ্গ তুলে কুগেলম্যান বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে দিল্লির উদ্বেগের প্রতি আরও সহনশীল অবস্থান গ্রহণ করেছে দেশটি এবং সপ্তাহান্তে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘গভীর’ করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।
একইসঙ্গে কুগেলম্যান মনে করেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করতে পারে। তবে বাণিজ্য এবং পানি বণ্টনের মতো ব্যবহারিক বিষয়গুলি উভয়ের মধ্যে একটি কার্যকর সম্পর্ক পরিচালনার মাধ্যম হতে পারে।