বন্যায় বাংলাদেশে অন্তত চার জন মারা গেছে বলে জানা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২২ অগাস্ট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আট জেলায় ২৯ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মন্ত্রণালযয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে।
আট জেলায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৫০ উপজেলা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ৩৫৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন।
ফেনীতে একজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। আট জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৪৪৪টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পানিবন্দী বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দিতে মোট ১ হাজার ৫৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন লোক এবং ৭ হাজার ৪৫৯টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আলী রেজা বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে।
হয়েছে।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল
টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও প্লাবিত হয়েছে খাগড়াছড়ির নিচু এলাকাগুলো।
গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল এলাকার নিচু এলাকায় পানি উঠেছে।
ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে মানুষ।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর প্রায় তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে খাগড়াছড়ির সঙ্গে দীঘিনালা এবং রাঙ্গামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ।
এই নিয়ে গত দুই মাসে ৪ বার বন্যা কবলিত হলো এই পার্বত্য জেলা।
চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বন্যা পরিস্থিতি অবনতির কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলরত আন্তঃনগরসহ ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২২ অগাস্ট) সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন ছেড়ে গেলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।
এদিকে ফেনী ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে রেললাইন পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া, রেলসেতুর ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বন্যা প্লাবিত ফেনী, কুমিল্লা ও অন্য অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক নিশ্চিতকরণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থাসমূহে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এছাড়াও বিটিআরসি, বিটিসিএল ও টেলিটক থেকে ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার রিপোর্ট অনুযায়ী বন্যাপ্লাবিত ১১টি জেলায় মোট ৬৯৮৬টি সাইটের (টাওয়ার) মধ্যে ৫৪৭৬টি সাইট সচল আছে। অচল টাওয়ারের হার ২১.৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী এবং খাগড়াছড়ির টাওয়ার; যার শতকরা হার যথাক্রমে ৪২.৪ শতাংশ এবং ৪১.৫ শতাংশ। অচল টাওয়ারসমূহ দ্রুত সচল করার ব্যবস্থা অব্যাহত আছে।
মোবাইল টাওয়ার সার্বক্ষণিক চালু রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব মোবাইল অপারেটর এবং টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানিদের বিটিআরসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, অপারেটরদের সঙ্গে বিটিআরসি থেকে ভার্চুয়ালি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
টেলিকম অপারেটরদের সাইটসমূহ সচল রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বিতরণের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সমন্বয় সাধন করছে।
টেলিকম অপারেটরদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অটুট রেখে পর্যাপ্ত পাওয়ার ব্যাকআপ (ব্যাটারি ব্যাকআপ, ডিজেল জেনারেটর, পোর্টেবল জেনারেটর ইত্যাদি) এর ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের চারটি মোবাইল অপারেটরের সহায়তায় বন্যাকবলিত এলাকার মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য ৫০০ মেগাবাইট ডাটা ফ্রি করা হয়েছে।