৫ সদস্য পরিবারে একমাত্র উপার্জন জাকির হোসেন (৩২)। তার আয়েই চলতো সবাই। বাড়ীর পাশেই ফারিসট গার্মেন্টসে জিপিকিউ পদে চাকরি করতেন। কৃষক বাবা জামাল উদ্দিন দয়ালের একমাত্র ছেলে জাকির। সীমিত আয়েও অভাবের মধ্যেই সুখেই ছিল এ পরিবারটি। তাদের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের কপাটিয়াপাড়া গ্ৰামে।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার ১ দফা আন্দোলনে গিয়ে মাওনা পল্লী বিদ্যুৎমোড়ে বিজিবির গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে। এর পর থেকে পরিবারটির সামনে অন্ধকার। অজানা ভবিষ্যতে০দ
র হাতছানিও আছে।
জাকির হোসেনের একমাত্র মেয়ে রামিসা তাবাসসুম ইলমা। পাঁচ বছর বয়স। এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না বাবা নেই।
বৃদ্ধ বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, ৪ আগস্ট সব কারখানার মতো জাকিরদের কারখানাও বন্ধ দেওয়া হয়। ফলে জাকির বাড়িতেই অবস্থান করছিল। ৫ আগস্ট দুপুরে জাকিরের কাছে ফোন আসে। ফোন পেয়ে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে জাকির শার্ট গায়ে দিতে দিতে বাড়ি থেকে খুব দ্রুত বের হয়ে যায়। এর পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে খবর পান। জানতে পারেন শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার উত্তরে পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে বিজিবির সাথে ছাত্রজনতার সংঘর্ষ চলছিল। সেখানে বিজিবির গুলিতে মারত্মক আহ হয়েছে তার ছেলে। এর কিছুক্ষণ পর ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান তারা।
জামাল উদ্দিন যখন ছেলের মারা যাওয়ার তথ্য দিচ্ছিলেন তখন পাশে বসে ডুকরে কাঁদছিলেন জাকিরের মা জায়েদা আক্তার। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার বাবা বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় কিছুই বলে গেল না। একটা মেয়ে আর একটা ছেলে ছিল আমার । ছেলেটাই ছিল অবলম্বন, সে চলে গেল। এখন আমাদের কে দেখবে। আমরাই কিভাবে চলবো, জাকিরের সংসারের বা কি হবে
জাকির হোসেনের স্ত্রী মনি আক্তার বলেন, মেয়ে শুধু বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। সে বিশ্বাসই করতে চাচ্ছে না তার বাবা আর ফিরবে না। মাঝে মধ্যেই বাবার জন্য মন খুব খারাপ করে রাখে। মাঝে মধ্যে আবার জিজ্ঞেস করে বাবা কি ফিরে আসবে? যদিও এর উত্তর নেই আমাদের কাছে।
জাকিরের স্বজনেরা জানান, ছেলেটির মৃত্যুর পর পরিবারটি একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। বাবা উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । কাজ করতে পারেন না। তাই অসচ্ছল পরিবারের দায়িত্ব ছিল জাকির হোসেনের উপর। ছোট্র শিশুটির দিকে তাকানো যায় না। এক দিকে শোক, অন্যদিকে জীবনযাপনে বিপর্যয় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই পরিবারটিকে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কিছুক্ষণ পর শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে উত্তেজীত ছাত্রজনতার সাথে বিজিবির সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ব হয়ে মারা যায় ৫ জন। এই ৫ জনের মধ্যে জাকির হোসেন একজন। বাকিরা হলেন, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আসাদের ছেলে সিফাত উল্লাহ(২২), শ্রীপুর পৌরসভার দারগারচালা গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে শরিফ আহমেদ(২০), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে মো. কাওসার (২৮) ও ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল মৃধা(৩০) ।