৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের মতো গাজীপুরের শ্রীপুরেও বিজয় মিছিল শুরু হয়। সে মিছিল যখন মাওনা পল্লী বিদ্যুতমোড়ের কাছে আসে তখনই একটি গুলি গলার এক পাশ দিয়ে ভেদ করে আরেকপাশ দিয়ে চলে যায়। সড়কে লুটিয়ে পড়েন কিশোর স্বাধীন(১৮)।
মৃত ভেবে রাস্তার পাশে পড়ে থাকেন ঘন্টাদুয়েক। তাজা রক্তে ভেসে যায় আশপাশ। এরই মাঝে লড়াচড়া ও গোঙ্গানীর শব্দে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। এতক্ষনে ঘটনাস্থলে এসে গেছেন বাবা ও মা সহ স্বজেনেরাও।
কোথাও গাড়ী নেই, অটোরিক্সায় করে তিন ঘন্টার প্রচেষ্টায় রাত ৮টার দিকে তাকে নিয়ে যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুই দিন সেখানে থাকার পরও মিলেনি কাঙ্খিত চিকিৎসা। যন্ত্রনায় কাতর ছেলের চিৎকারে তাকে বাঁচাতে ভর্তি করেন একটি বেসরকারী হাসপাতালে। সেখানেও টাকার অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে বাড়ীতে নিয়ে আসেন। এখন তো যন্ত্রনায় কাটছে প্রতিমুহুর্ত।
স্বাধীনের বাবা আব্দুস সাত্তার, বাড়ী নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার চারখালৌজা গ্রামে। তিনি সবজিবিক্রেতা। ভ্যানে করে শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর বাজারে সবজি বিক্রি করেন। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়ীর বাড়াটিয়া তারা। অসহায় পরিবার হওয়ায় বাবাকে ব্যবসায় সহায়তা করতেন স্বাধীন।
স্বাধীনের বাবা আব্দুস সাত্তারের ভাষ্য, দুই মেয়ে ও এক ছেলে তার। অভাবের কারণে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরে এসেছেন। অনেক কস্ট করে সংসার চলতো। আর ছেলে গুলি খাওয়ার পর থেকে তো অন্ধকারে পড়েছি। স্বাধীন স্থানীয় মেধাসিড়ি স্কুল থেকে দশম শ্রেণীতে পড়ার পর দারিদ্রতার জন্য আর পড়তে পারেননি।
তিনি আরো বলেন, বন্ধুদের সাথে বিজয় মিছিলে গিয়েছিল স্বাধীন। মাওনা পল্লী বিদ্যুত মোড়ে সেসময় আটকা পড়েছিল বিজিবির সদস্য, সেখান থেকে ছোড়া হয় গুলি। সে গুলি গলার এক পাশ ভেদ করে অপরপাশ দিয়ে চলে যায়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরতো বেঁচে থাকার প্রত্যাশাও ছিল না কারোও, মৃতের ঘোষনাও হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুই দিন রেখে তারা বের করে দেয়। ছেলেকে বাঁচাতে বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখানে ঋন করে ৬০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চিকিৎসকরা আরো কয়েকদিন থাকতে বলেছিলো। টাকার যোগান না থাকায় বাড়ীতে নিয়ে এসেছি। এখন খাবারের যোগানও নেই, ঔষুধও কিনতে পারছি না।
স্বাধীনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, অর্থের অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে।ছেলেকে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে তার বাবার ব্যবসাও বন্ধ। দুরাবস্থায় আমাদের সবার চোখেই অন্ধকার।