স্বামীর স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে আলেম বানানোর। তার স্বপ্ন অনেক দূরে সরে গেছে। একটি গুলি সব শেষ করে দিল। উড়ে গেল তার স্বপ্ন। দুই মেয়েকে নিয়ে পড়ে গেছি অকূল পাথারে। মনে হচ্ছে পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। দাঁড়াবার মতো শক্তি নেই। সেদিন অনেকে পাশে দাঁড়াবার আশ^াস দিয়েছিলেন। এখন কেউ খবর রাখে না। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকে আলেম বানানোর। তার স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যবসার হাল ধরেছি। দুই মেয়েকে আলেম বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব। এতে স্বামীর আত্মা
কিছুটা শান্তি পাবে।’ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে গতকাল কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শাহীনূর।
গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান শেখ জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)। তিনি উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা গ্রামের শেখ আ. হান্নানের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরা এলাকা থেকে এসে গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাওনা চৌরাস্তার অদূরে মক্কা-মদিনা স্পিনিং মিলের পাশে ছিল তার ব্যবসা।
শাহীনূর আরও বলেন, আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। ছোট একটি ব্যবসার আয়ে চলত সংসার। তার অনেক স্বপ্ন ছিল দুই মেয়ে জিনথিয়া (৭) ও জাকিয়াকে (৫) ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে আলেম বানাবেন। তার সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। ঘাতকের একটি গুলি মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল। নিথর দেহ পড়ে রইল সড়কে।
গত ৪ আগস্ট মাওনা চৌরাস্তায় পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান শাহীনূরের স্বামী শেখ জাহাঙ্গীর আলম। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীর হঠাৎ মৃত্যু তাকে ঠেলে দিয়েছে ঘোর অন্ধকারে। দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে তার শুধুই ভাবনা। কী করে চলবে তাদের লেখাপড়া। কীভাবে পূরণ হবে স্বামীর অপূর্ণ স্বপ্ন। পায়ের নিচে দাঁড়াবার মতো মাটি যেন সরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করতে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে চাইছি। তার ব্যবসার হাল ধরেছি। এক সময় স্বামীর সঙ্গে দোকানে সময় দিতাম। সেই অভিজ্ঞতাই ভরসা। যখন শরীর-মন ভালো থাকে তখন দোকানে বসি। মন খারাপ হলে দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নীরবে কান্না করি। ঘরে অবুঝ দুই সন্তান শুধুই বাবার জন্য হাহাকার করে। তাদের বাবার অভাব কীভাবে পূরণ করব?
তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, শুনেছি দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অনেকের প্রাণ গেছে। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করল আমি কি তাদের বিচার পাব না।