আন্দোলনে উত্তাল সারাদেশ। ৫ আগষ্ট সকাল থেকেই ছাত্র জনতার কাতারে এসে আন্দোলনে অংশ নেন শাকিল (২৮)। পেশায় গাড়ী চালক হলেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পিছপা হননি।
হাজারো জনতার সাথে সেদিন গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আন্দোলনে অংশ নেয় সে। বেলা সাড়ে এগারটার দিকে একদল বিজিবিকে ভারতীয় পুলিশ সন্দেহে আটক করে রাখে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। সেখানে চলছিল মিছিল।
এক সময় সে মিছিলে চলে মুহুর্মুহ গুলি। হঠাৎ একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শাকিলের কোমড়ে। মাটিতে লুটিযে পড়েন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসা না মেলায় একদিন পরই যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানেও একই অবস্থা। গুলি বের করতে না পারায় সেখান থেকে বাড়ী ফিরে আসেন। এখন শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটছে তার। অভাব আর অনটনের সংসারে চিকিৎসা নিয়েও আছে দুশ্চিন্তা।
শাকিল শ্রীপুরের বেলতলী গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে। সীমিত আয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সে। শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় পুরো পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তার রাফি নামের ৫ বছরের এক ছেলেও রযেছে।
শাকিল বলেন, পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, মেরুদন্ডের হাড়ের ভেতর রয়ে গেছে গুলি। সরকারী দুই হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা পাননি, গুলিও বের করে দেননি তারা। গত ১৬দিনে ধারদেনা করে চিকিৎসা ও দৌড়াদৌড়ি করে ৬০হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন ঘরে খাবার নেই, ঔষুধ কেনার টাকাও নেই, গুলি যে বের করতে পারবো সে নিশ্চয়তাও কেউ দিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, গুলির যন্ত্রনায় এখন মরে যাওয়ার অবস্থা । সবার হাতে ধরি পায়ে ধরি আমার আমার গুলিটা বের করে দিন। আর না হলে আমার পরিবারকে না খেয়ে মরতে হবে।
শাকিলের স্ত্রী রিপা আক্তার বলেন, তার বাবা মারা গেছেন। শাকিল তার মায়ের পরিবারকেও দেখতো। তার উপর নির্ভরশীল দুটি পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় তার স্বামী এখন শয্যাশায়ী। রাত হলেই গুলির যন্ত্রনায় কান্নাকাটি করেন। স্ত্রী হিসেবে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।