সব
facebook raytahost.com
জিয়াউর রহমান: জাগদল থেকে যেভাবে বিএনপি গড়েন, রাজনীতিতে যেভাবে তার উত্থান হয় | আজকের বাণী

জিয়াউর রহমান: জাগদল থেকে যেভাবে বিএনপি গড়েন, রাজনীতিতে যেভাবে তার উত্থান হয়

জিয়াউর রহমান: জাগদল থেকে যেভাবে বিএনপি গড়েন, রাজনীতিতে যেভাবে তার উত্থান হয়

বাংলাদেশে সামরিক শাসনের অধীনে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি গড়ে তুলেছিলেন। পয়লা সেপ্টেম্বর দলটির তিষ্ঠাবার্ষিকী। লেখক-গবেষক মহিউদ্দীন আহমদের লেখা ‘বিএনপি সময়-অসময়’ বইতে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে এই দল গঠনের নেপথ্য কাহিনী। বইটির নির্বাচিত অংশ সংকলন করেছেন আকবর হোসেন: )

১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক।…. রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।”

এরপর ১৯৭৬ সালের মে মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, “আমি একজন শ্রমিক।”

একজন ‘শ্রমিক’ ও ‘সৈনিক’ কিভাবে একের পর এক সিঁড়ি পেরিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে চলে যেতে পারেন, তার একটা চিত্রনাট্য আগেই লিখে রেখেছিলেন পাকিস্তানের সেনাপতি আইয়ুব খান। জেনারেল জিয়া এ চিত্রনাট্য ধরেই এগুতে থাকেন এবং অবশেষে গন্তব্যে পৌছে যান।

জিয়াউর রহমান স্বভাবে ছিলেন ধীর-স্থির। তিনি এক-পা, দুই-পা করে এগুচ্ছিলেন। তিনি মনে করলেন, তাঁর একটা ঘোষণা-পত্র বা কর্মসূচী থাকা দরকার। উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২২শে মে ‘আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ জেনারেল জিয়া ১৯দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন।

তিনি তখনো একজন সামরিক শাসক। সেনাবাহিনীতে দৃশ্যত তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ ছিলনা। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক বিরোধীরা বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং দিশেহারা। তারপরেও জিয়াউর রহমানকে প্রমাণ করতে হবে, তাঁর পেছনে জনসমর্থন আছে; শুধু বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসেননি।

তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য হ্যাঁ-না ভোট নেয়া হলো। নির্বাচন কমিশন জানাল, দেশের ৮৮.৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৯৮.৯ শতাংশ হ্যাঁ ভোট দিয়েছে।

ভোটার উপস্থিতির এ হার মোটেও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। গণভাটের মাধ্যমে রাজনৈতিক বৈধতার একটি ছাড়পত্র তৈরি করলেন জিয়াউর রহমান।

জেনারেল জিয়া তাঁর উপদেষ্টামন্ডলীতে অসামরিক কিছু তারকা যোগ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ শামসুল হক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৈয়দ আলী আহসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ অন্যতম।

জিয়াউর রহমান ইতোমধ্যে রাজনীতিবিদদের যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তিনি যাঁদের সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাসানী-ন্যাপের সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়া।

১৯৭৫ সালে যারা ঢাকঢোলা পিটিয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন, মধ্য আগস্টে গণেশ উল্টে যাওয়ায় তাদের অনেকেই বাকশালের গালমন্দ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, নতুন শাসকদের কৃপা পাওয়া। জিয়াউর রহমান এসব রাজনীতিবিদকে দেখতেন কিছু করুণা আর কিছু ঘৃণা নিয়ে।

অলি আহমদের সাথে মাঠ পর্যায়ের অনেক লোকের যোগাযোগ ছিল। অলি আহমেদ ২০০৬ সালে বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করেন।

জিয়াউর রহমান একদিকে ‘সমমনা’ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট তৈরির কাজ করছেন, অন্যদিকে তিনি নিজস্ব একটা রাজনৈতিক দল তৈরির বিষয়টিও খুব গুরুত্বের সাথে দেখলেন। তাঁর মনে হলো জোটের মধ্যে শতভাগ অনুগত একটা দল না থাকলে জোটকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সে লক্ষে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল’ বা ‘জাগদল’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরির ঘোষণা দেন। তিনি নিজে থাকলেন নেপথ্যে।

জাগদল রাজনীতিতে তেমন ঢেউ তুলতে পারেনি। রাজনৈতিক মাঠের চেনা মুখগুলো জাগদলে খুব কমই যোগ দিয়েছিল।

১৯৭৮ সালের ২৮ এপ্রিল জিয়াইর রহমান নিজেই নিজেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নোতি দিলেন। ১৯৭৮ সালের ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হলো। জিয়া যদিও সেনাবাহিনীর প্রধান, তিনি পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে গেলেন।

সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এককাট্টা। নানান মত ও পথের এ ফ্রন্ট নিয়ে জিয়াউর রহমান স্বস্তিতে ছিলেন না। তিনি ‘একমনা’ লোকদের নিয়ে আলাদা দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন।

দল তৈরির জন্য যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছিল, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি দলের নাম ‘জাস্টিস পার্টি’ রাখার প্রস্তাব করেন। নামটি কিছুটা পানসে হওয়ায় সেটি গ্রহণযোগ্য হয়নি। দলের নামের সাথে জাতীয়তাবাদী থাকাটা জরুরী ছিল। শেষমেশ স্থির হয়, দলের নাম হবে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’। জিয়াউর রহমান নিজেই দলের নামকরণ করেছিলেন।

১৯৭৮ সালের ২৮ আগষ্ট ‘জাগদল’ বিলুপ্তির ঘোষণা দেন।

১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁ প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রধান হিসেবে দলের নাম, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচী আনুষ্ঠানিক দল ঘোষণা করেন।

বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন নয়জন । তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছাড়া যুক্ত ছিলেন বিচারপতি সাত্তার, নাজমুল হুদা, মওদুদ আহমদ এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী অন্যতম।

গবেষক মহিউদ্দন আহমদ তাঁর বইতে লিখেছেন, বিএনপি এমন একটি দল, যার জন্ম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। এই অঞ্চলে সব দলের জন্ম হয়েছে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে, রাজপথে কিংবা আলোচনার টেবিলে। বিএনপি সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। দলটি তৈরি হলো ক্ষমতার শীর্ষে থাকা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারা, যিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি রাজনীতি করবেন।

(লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের বই ‘বিএনপি সময়-অসময়’ থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।)

শেয়ার

আপনার মতামত লিখুন :

এর আরও খবর
পুড়ে যাওয়া সুধাসদনের আসবাব নিয়ে যাচ্ছে মানুষ

পুড়ে যাওয়া সুধাসদনের আসবাব নিয়ে যাচ্ছে মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ চীনের

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ চীনের

সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে ‘অপপ্রচার’ বন্ধে একমত বিজিবি-বিএসএফ

সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে ‘অপপ্রচার’ বন্ধে একমত বিজিবি-বিএসএফ

নতুন বছরে তারেক রহমানের বার্তা

নতুন বছরে তারেক রহমানের বার্তা

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যেমন খুশি তেমন সাজো

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যেমন খুশি তেমন সাজো

ঠোঁট সেলাই, গোপন বন্দিশালা, সিমেন্টে বেঁধে নদীতে ফেলা- গুম কমিশনের প্রতিবেদনে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

ঠোঁট সেলাই, গোপন বন্দিশালা, সিমেন্টে বেঁধে নদীতে ফেলা- গুম কমিশনের প্রতিবেদনে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

সর্বশেষ সংবাদ সর্বাধিক পঠিত
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
কার্যালয়: ১৯৫, ফকিরাপুল ১ম গলি, রহমান ম্যানশন, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৩-২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।