একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সাবেক রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার বনানীর বাসা থেকে মি. কবিরকে গ্রেফতার করা হয়।
তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বিবিসিকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রমনা থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার করা হয়।
বর্তমানে তাকে ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তবে আজ মঙ্গলবার ১৭ই সেপ্টেম্বর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী, সোমবার রাত ১০টার দিকে সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলামকে (সুজন) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিনের বরাতে খবরগুলোতে বলা হয়েছে, শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামের এক তরুণ হত্যা মামলায় এ গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।
গত পহেলা সেপ্টেম্বর ইমরান হোসেনের মা কোহিনূর আক্তার বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। সেখানে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ মোট ২৯৭ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে।
শাহরিয়ার কবির ও নূরুল ইসলাম সম্বন্ধে
শাহরিয়ার কবিরকে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হলেও তার নামে ঢাকার একাধিক থানায় কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
গত ২০শে অগাস্ট হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব (শিক্ষা ও আইন) মুফতি হারুন ইজাহার চৌধুরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১৩ সালের পাঁচই মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ করেন।
সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। সেই ২৪ জনের মাঝে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবিরের নামও আছে।
এদিকে, মো. নূরুল ইসলাম সুজনকে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা যে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই মামলায় মোট ২৯৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সেখানে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সালমান এফ রহমানসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকের নাম আছে।
তবে এই মামলায় অভিযুক্তদের মাঝে একাধিক সাংবাদিকের নামও রয়েছে। বিশেষ করে একাত্তর টেলিভিশনের একাধিক সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিক, সময় টেলিভিশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তাপ্রধান মুন্নী সাহা।
আগে যারা গ্রেফতার হয়েছেন
গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুই ডজনেরও বেশি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ হাসিনার সাবেক জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রয়েছেন।
গতকাল সোমবার তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর একইদিনে ফরহাদ হোসেনের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
এছাড়া, সাবেক দুই আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হকসহ পুলিশের বেশ কয়েকে জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই হত্যা মামলা।
এছাড়া গণহত্যা এবং অপহরণের মতো অভিযোগেও মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।
ওইসব মামলার আসামির তালিকায় তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামও রয়েছে। একইভাবে নাম রয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতাদের।
তাদের মধ্যে গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাবার পরপরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন তার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য।
সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে বিমানবন্দর থেকে আটক করার খবর পাওয়া যায়।
যদিও পরবর্তীতে জুনাইদ আহমেদ পলক, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে একই দিনে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে, সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, গুম ইত্যাদির মামলা করা হচ্ছে।
তাদেরকে অনেককে টিপু মুনশির মতো গ্রেফতার করা হয়েছে, অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মণি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও গ্রেফতার হয়েছেন।
সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেমন গ্রেফতার হয়েছেন, তেমনি সাবেক অনেক কর্মকর্তাও আটক হয়েছেন।
এদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
পাঁচই অগাস্ট সরকার পতনের পর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সেই সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, যিনি এক সময় র্যাবে কর্মরত ছিলেন, তাকেও আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় নিহতের ঘটনাকে ঘিরে যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে, তার সমালোচনাও করছেন অনেকেই।