গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করেছে রেখেছে। তাদের দাবী কোন আশ্বাসে কাজ হবে না, নগদ টাকা হাতে দিলেই তারা ঘরে ফিরবেন। এদিকে অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়। জনদুর্ভোগ বাড়ে চলাচলকারী লোকজনের।
কারখানার শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, এরা শুধু মিথ্যা আশ্বাস দেয়, এভাবে মাস পার করেছে। তবে এবার আর নগদ টাকা ছাড়া সড়ক ছাড়বো না, এখানেই বসে থাকবো।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন রাতভরও চলে। রোববার দিনও টানা মহাসড়কে শ্রমিকরা অবস্থান করে অবরোধ তৈরি করে । এ কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, যানজটে আটকা পড়ে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বিকল্প পথে চলাচল করছে।
এছাড়াও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারে অনুরোধে করে একটি ট্রাফিক আপডেট দেয়া হয়েছে। ওই আপডেটে বলা হয়েছে, সম্মানিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীবৃন্দের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্টসের শ্রমিকগণ কর্তৃক ভোগড়া বাইপাস ও মালেকের বাড়ীর মাঝামাঝি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে গতকাল সকালে শুরু করা মহাসড়ক অবরোধ এখন পর্যন্ত (সকাল ৭টা) অব্যাহত আছে বিধায়, সম্মানিত যাত্রীগণকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিকল্প পথ:
ময়মনসিংহ থেকে বা টাঙ্গাইল থেকে যে গাড়ি গুলো আসছে সেগুলো ভোগড়া থেকে ডাইভারসন দেয়া হচ্ছে। ঢাকা বাইপাস হয়ে, কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে বা তিনশ ফিট হয়ে যাতে ঢাকায় যেতে পারে।
অপরদিকে, ঢাকা থেকে যেগুলো ময়মনসিংহ মুখী গাড়ি গুলোকে স্টেশন রোড হয়ে মিরের বাজার হয়ে ওদিক দিয়ে ঢাকা বাইপাস হয়ে তারা আসতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সাথে লাঠিসোটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছে। শ্রমিকদের অবরোধের জায়গার উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে আটকা পড়া যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগই অন্য পরিবহন ও জাতীয় পরিবহনের গাড়ি। এসব গাড়ি গত রাতে ঘুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যানজটে আটকা পড়ায় আর কোন দিকে যেতে পারেনি। আটকে পড়া পন্যবাহী যানবাহনের মধ্যে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী অনেকবাস থেকে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছে ফলে অনেক যানবাহন যাত্রী শূণ্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তাকওয়া পরিবহনের হেলপার আসিফ জানান, রোববার সকালে জৈনা বাজার থেকে যাত্রী তুলে জয়দেবপুর চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাসটি কয়েক ধাপে ছোট ছোট যানজট পেরিয়ে রাজেন্দ্রপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত যেতেই যানজটে আটকে যায়।
এদিকে শ্রমিক আন্দোলনে যানজটের কারণে মহাসড়কে দুরপাল্লার যানবাহন কম চলাচল করছে। স্বল্প দুরত্বের লোকাল পরিবহন চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ তুলছেন যাত্রীরা।
সকালে রাজধানীর উদ্দেশ্যে যেতে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় দুরপাল্লার বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, সকালে ঢাকায় যেতে দাড়িয়ে আছেন। জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৫০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য বাসগুলো জানাচ্ছেন, রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাকী রাস্তায় যানজট। এখন বেশ চিন্তায় আছি
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, গতকাল (শনিবার) সকাল ৯টা থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের এই দুই মাসের বেতনের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে অবস্থান করছে শ্রমিকরা। তাদের একটাই কথা বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা হাইওয়ে রোড ছাড়বো না।
তিনি আরো বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ বার বার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে শ্রমিকরা এখন আর আমাদের কথা আর বিশ্বাস করে না। আমরা কোন মুখে ওদেরকে বলবো, তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো, তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দিবো।
শ্রমিকদের মতই মালিকের প্রতি আমাদেরও আস্থা নেই। যে কারণে ওরা গতকাল থেকে বসে আছে। আমরা তাদের একাধিকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিসে এসে বসো, অবস্থান নাও। কিন্তু ওরা নাছোড় বান্দা মহাসড়ক ছাড়বে না। এটাকে কেন্দ্র গতকাল সন্ধ্যাও ওদেরকে বুঝোনো হয়েছে, রাতেও চেষ্টা করেছিলাম ওরা যায়নি। আজকে তারা আছে। এই ধারাবাহিকতায় টিএনজেড এর শ্রমিকরা কলম্বিয়া, ভোগড়া বাইপাস, চৌরাস্তায় এদিকে প্রায় ২৫- ৩০ টি কারখানার আছে এখন তারা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকরা ভেতরে ঢুকতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমরা আবারো চেষ্টা করতেছি। একটু আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এসেছিল, আমরাসহ কথা বলেছি। আশা করি এটার সমাধান হবে। এটা নিয়ে আমাদের সিনিয়র স্যাররা আছেন, বিজিএমইএ, শ্রম অধিদপ্তর কাজ করছে।
মহাসড়কের উপরের কেন এত ক্ষোভ?- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমার ধারণা ওরা মনে করে মহাসড়ক বন্ধ করতে পারলে মালিকের উপর চাপ আসে, টাকার ব্যবস্থা করতে হয়। তাদের এরকম একটা ধারণা করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠান দুজন মালিক। বর্তমানে একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যিনি দেশে আছেন তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি মন্ত্রণালয়ে বসে আছেন। যেখানে এক্সপোর্ট বিল্প আপ ফান্ড আছে। এখানে ওনার কিছু টাকা আছে। ওনি চাচ্ছেন এই টাকা যদি ওনাকে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, ১১-১২ কোটি টাকার মতো তাহলে ওনি এই দুই মাসের বেতনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। ওনার জরুরী মুহুর্তে ১১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকার দরকার বলে ওনি আমাকে জানিয়েছেন।