নানা অনিয়ম করেও ধরাছোঁয়ার বাহিরেই রয়ে গেছেন আওয়ামীলীগের ক্ষমতার প্রভাবধারী শ্রীপুর পৌর নির্বাহী রফিকুল হাসানের দুর্নীতি।
পৌরসভার প্রশাসন বিভাগের প্রতিটি খাত থেকেই শতকরা হারে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অনিয়মের কারণে মন্ত্রনালয় থেকে তদন্ত করেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তার বিরুদ্ধে। পৌরসভার প্রশাসন বিভাগ থেকে কোটি কোটি টাকা সরানোর নেপথ্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।
তার বাড়ী জামালপুরে হওয়ায় আওয়ামীলীগ নেতা মির্জা আজমের প্রভাবে শ্রীপুর পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন । তার ভয়ে তটস্থ থাকতো পৌর কর্মকর্তা থেকে কর্মচারীরাও। নিজ জেলা জামালপুরেও নামে বেনামেও সম্পদ গড়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে ৪লাখ টাকা গ্রহণ এবং চাকরি নীতিমালা অমান্য করে তাকে হয়রানি করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ হরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করেছিলেন গত বছর । তার কাছ থেকে পৌর নির্বাহী রফিকুল হাসান ৪লাখ টাকাও গ্রহণ করেছিলেন। বকেয়া বেতনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের আদেশের পরও তার সহকর্মীদের কাছ থেকেও ঘুষ নেন রফিকুল হাসান।
এ বিষয়ে আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, তার সহকর্মী হওয়ার পরও তাকে চাকুরীচ্যুতির ভয় দেখিয়ে ৪লাখ টাকা ঘুষ নেন পৌর নির্বাহী। বিভিন্ন বিভাগ থেকেও তদন্ত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।
পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, রফিকুল হাসান পৌরসভায় দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই প্রশাসন বিভাগকে ঘুষ দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত করেন। প্রতি ফাইল থেকেই ঘুষ আদায় ছিল তার সিস্টেম। জন্ম নিবন্ধন শাখা ছাড়াও শিল্প কারখানার লাইসেন্স, এনওসি, টেন্ডার ছাড়া পৌরসভার স্টেশনারী, ছাপাখানার মালামাল সরবরাহের নামে প্রতি অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া, বেনামে মাষ্টাররোলের কর্মচারীদের নামে বেতনের টাকা নিজের পকেটে নেয়া সহ ভুয়া বিল ভাউচারের নামে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও পৌর তহবিল থেকে কোটেশনের মাধ্যমে টাকা সরানো, বেনামী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনুদান, পৌর কবরস্থান সংস্কার, টিআর, কাবিখার টাকা আত্নসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে৷
অডিটের নামে ব্যায় হতো লাখ লাখ টাকা:
শ্রীপুর পৌরসভার নানা অনিয়মে ভরপুর ফাইলপত্র অডিটের নাম করেপ্রতি অর্থবছরে লাখ লাখ টাকা ব্যায় করতো পৌর নির্বাহী রফিকুল হাসান। অভিযোগ আছে টাকার জোড়েই অডিট নিস্পত্তি হতো এ পৌরসভায়। প্রতি অর্থবছরে ২০লাখ টাকার উপর ব্যায় করে অডিট নিস্পত্তি করতো পৌর নির্বাহী।
কোটি টাকার বানিজ্য করতে চেয়েছিলেন এই পৌর নির্বাহী। গোপনে স্থানীয় সরকার বিভাগকে ম্যানেজ করে ২০২৩সালের ৫জুন ৯টি পদে ১৭জনের নিয়োগের ছাড়পত্রও আনেন তিনি। বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে অগ্রীম গ্রহন করে তিনি গোপনে অখ্যাত একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেন। আবেদনের সময় শেষ হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয়দের রোশনলে পড়েন। পরে চাকুরী প্রার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় নিয়োগটি স্থগিত করলেও পৌর নির্বাহী রফিকুল থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
এ দিকে ৫ ফেব্রুয়ারী মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গত ১৪মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের পৌর- ১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে গাজীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে পৌর নির্বাহীর অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য পত্র দেয়া হয়।
গাজীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ওয়াহিদ হোসেন বলেন, তিনি তদন্ত করে মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। এখন যা করার মন্ত্রনালয় করবেন।
যদিও পৌর নির্বাহী রফিকুল হাসান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সবই মিথ্যা বলে দাবী তার