গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের দুটি গ্রামের দুই যুবক সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
একই এলাকায় হওয়ায় সৌদিতে তাদের পরিচয়ের পর গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। ভাগ্যবদলের আশায় প্রবাসে গিয়ে অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলেন তারা।
গত সোমবার রাতে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কক্ষে চালু করেছিলেন রুম হিটার। ঘুমের মধ্যেই হিটারটি বিস্ফোরিত হলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান দুই যুবক।
অভাব-অনটনের মাঝে পরিবারে সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমানো এই দুই যুবক ছিলেন পরিবারের আশার আলো। কিন্তু এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাদের জীবন থমকে গেল। এখন স্বজনদের চোখে মুখে শুধুই হতাশার ছাপ।
মাকসুদুলের পরিবারে স্বপ্নভঙ্গ
মৃত মাকসুদুল হাসান (২৬) গাজীপুরের গোসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বাবা মোখলেসুর রহমান কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছেন বয়সের ভারে। বড় ভাই ইট-বালুর শ্রমিক, ছোট ভাই এইচএসসি পাস করে বেকার। মা রিনা বেগম গুরুতর অসুস্থ। এই পরিস্থিতিতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিন বছর আগে ধারদেনা করে সৌদি আরব যান মাকসুদুল।
রিয়াদে একটি রিসোর্টে কাজ করে তিন বছরে সব ঋণ শোধ করেন। বাড়ি ফেরার এক মাস আগে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি। বিয়ের ২১ দিনের মাথায় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল নিজ জমিতে ঘর তুলে নববধূকে ঘরে আনবেন।
ছোট ভাই রাতুল হাসান রিফাত বলেন, “ভাই ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার আয়ে আমাদের সংসার চলত। আগামী মাসে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।”
মাকসুদুলের স্ত্রী ফারজানা এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, “কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। তিন বছর কষ্ট করেছি নতুন জীবনের আশায়। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।”
অকুল পাথারে মাসুমের পরিবার
গোসিঙ্গার পটকা গ্রামের মাসুম মিয়া (৪০) গত সাত মাস আগে সৌদি আরব পাড়ি জমান। বাবাহীন পরিবারে দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সংসার চালাতে গিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রবাসে যান তিনি। ছয় লাখ টাকা করচ করে দালালদের মাধ্যমে প্রবাসে গেলেও কাজ না পেয়ে পরিবারে ফোন করে কান্নাকাটি করতেন। বলতেন, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে দেশে ফিরিয়ে নাও।”
মাসুমের পরিবারে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, এক প্রতিবন্ধী ছেলে এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে। তার মা পিয়ারা বেগম বলেন, “অভাবের সঙ্গে লড়তে লড়তে ছেলে চলে গেল। দেশে আসার জন্য কত কান্না করত। এখন ছেলের লাশ আনতে পারলেই শান্তি পাব।”
হতাশা নিয়ে এই পরিবারটি ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তা ও ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে।
পিয়ারা বেগম ছেলের লাশ দেশে এনে বাড়ির আঙিনায় দাফন করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে দাও। তার কবরের পাশেই শেষ জীবন কাটাতে চাই।”
পরিবারের আকুতি
মাকসুদুল ও মাসুমের পরিবার এখন তাদের লাশ দেশে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন। পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে ঋণের বোঝা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায়।