ফয়সাল আহমেদ, গাজীপুর
অভাব আর দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে লেখাপড়ার পাঠ চুকাতে হয় বিপ্লবকে(১৭) সপ্তম শ্রেণীর পাশ করার পরই।
কৃষক বাবার কষ্ট তাকে পীড়া দিতো, তাইতো সংসারারের সচ্ছলতা আনতে অপরিণত বয়সেই বন্ধুদের সাথে বাড়ী ছেড়ে চলে আসে গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায়।
সেখানে আল- মদিনা ব্যাটারী হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে কাজ নেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে বাবা- মাকে সাহায্য করা, তবে বিধিবাম। মাত্র ১৫দিন চাকুরী করার পরই জীবনের ইতি টানতে হয় তাকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র – জনতার চুড়ান্ত আন্দোলনের গণঅভ্যুথানের দিন ৫ আগষ্ট গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় বিজিবি সদস্যদের এলোপাথারী গুলিতে প্রান হারান বিপ্লব।
বিপ্লব টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার কদমতলী গ্রামের আব্দুল খালেক- বিলকিছ দম্পতির প্রথম সন্তান। এ দম্পত্তির ৫ বছর বয়সী আরো এক ছেলে রয়েছে।
বিপ্লবের বন্ধু রানা বলেন, সেদিন ছিল আন্দোলনের চূড়ান্ত দিন। সকাল থেকেই ছাত্র- জনতার দখলে ছিল মাওনা চৌরাস্তা। হাজারো জনতা পল্লী বিদ্যুত মোড় এলাকায় ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুপুরের দিকে শেখ হাসিনার পলায়নের খবরে আনন্দ মিছিল বের হয়।
কারখানা বন্ধ থাকায় সহকর্মীদের সাথে সকাল থেকেই রাস্তা অবরোধে যোগ দেয় বিপ্লব। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিজয় মিছিল পল্লী বিদ্যুত মোড় এলাকা অতিত্রম করাকালে আওয়ামীলীগের লোকজনের উস্কানীতে সেখানে সকাল থেকে আটকে থাকা বিজিবির সদস্যরা এলোপাথারী গুলি চালায়।
একটি গুলি এসে মাথার খুলি ভেদ করে চলে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বিপ্লব। বন্ধুরা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার মাওনার আল- হেরা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করেন।
বিপ্লবের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, ছেলে হারানোর বেদনার বিষে নীল হয়ে গেছি, অভাব আর দারিদ্রতার চেয়েও এটি ভয়ঙ্কর। খেয়ে না খেয়েও আগে সুখী ছিলাম, এখন হৃদয়ে পাথর চাপা পড়েছে।
খালেক বলেন, গরিব মানুষ তেমন কিছু বুঝি না, কত কষ্ট করে ছেলেকে বড় করলাম, আর একটি গুলি নব কেড়ে নিলো। এর যদি বিচার দেখে যেতে পারতাম, কষ্ট কিছু কমতো।
তার দাবী ছেলে হত্যার বিচার দাবী করে শ্রীপুর থানা, গাজীপুর পুলিশ সুপার ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বাড়ীর আঙিনায় বিপ্লবের কবর, সে কবরের দিকে সবসময় চেয়ে থাকেন মা বিলকিছ। তিনি বলেন, আমার ছেলে কোন রাজনীতি করতো না, কেন তাকে হত্যা করা হলো, কার কাছে এর বিচার চাইবো? তবে ছেলের লাশের বিনিময়ে দেশে যদি শান্তি আসে সেটাই আমার বড় পাওয়া। আর বিচার দেখে যাওয়ারও প্রত্যাশা থাকবে বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত।
বিপ্লবের মামা হাফিজ উদ্দিনের ভাষ্য, এ পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত কারো সরকারের উচিত তাদের পাশে দাড়িয়ে সহযোহিতা করা।
Show quoted text